বাক-স্বাধীনতা আমাদের অন্যতম একটি মৌলিক মানবাধিকার। পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই নাগরিকের বাক-স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছে।
তবে এ বাক-স্বাধীনতা একেবারে শর্তহীন নয়। বাক-স্বাধীনতা মানে যা খুশি তাই বলা নয়। রাষ্ট্র ও নাগরিকের কল্যাণের স্বার্থেই এক্ষেত্রে কিছু শর্ত ও বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে জনগণ এ স্বাধীনতা প্রয়োগ করতে পারে।
...
ইংল্যান্ডে বাক-স্বাধীনতা কতিপয় বাধা নিষেধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যদিও নাগরিকের সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে এবং নিজ ইচ্ছানুযায়ী বলারও চিন্তা করার অধিকার রয়েছে, তারপরও তিনি (ক) মানহানিকর (খ) রাজদ্রোহী (গ) ঈশ্বর নিন্দা ও (ঘ) অশ্লিলতামূলক অথবা (ঙ) অবমাননাকর বা শান্তি বিনষ্ট হতে পারে এমন কোন বক্তব্য প্রকাশ বা প্রচার করতে পারে না।
উপরের শর্ত বা বাধা-নিষেধগুলোর কিছুটা বিস্তারিত নিচে দেওয়া হলো:
ক. মানহানিকর: কারও বিরুদ্ধে কেউ- ১. মিথ্যা ২. অবিবেচনাপ্রসূত অথবা ৩. ক্ষতিকর বক্তব্য রাখলে বা প্রকাশ করলে তা আক্রান্ত ব্যত্তির মানহানির সামিল হবে।
মৌখিকভাকব নিন্দাসূচক কিছু বললে তাকে Slander এবং লিখিতভাবে অখ্যাতিজনক বা খ্যাতি বিনষ্টকারী কোন উক্তি করলে তাকেLibel বলা হয়।
কিন্তু লাইবেলের ক্ষেত্রে অপমাননাকর উক্তি অবশ্যই লিখিত হতে হবে। কোনো তথ্য প্রকাশিত বা প্রচারিত না হলে কোনো অপরাধ বলে গণ্য হবে না এবং তা আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিমূলকও নয়।
খ. রাজদ্রোহীমূলক কাজ: রাজদ্রোহমূলক কাজ বা Sedition বলতে এমন একটি উদ্যোগকে বোঝায় যা
১. রাজা বা সরকার বা ইংল্যান্ডের সংবিধান অথবা সদস্যদের উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও অবিশ্বাস ছড়ায় ও বে-আইনীভাবে রাষ্ট্রে অথবা গীর্জায় প্রতিষ্ঠিত কর্মসূচী পরিবর্তন করার জন্য ইংল্যান্ডের নাগরিকবৃন্দকে উস্কানি প্রদান করে।
২. রাজা অথবা রানীর অনুগত প্রজাবৃন্দের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টিতে উৱসাহ দান করে। ইংল্যান্ডে রাজদ্রোহীতার অভিযোগে কোন ব্যক্তিকে শাস্তি দেবার দৃষ্টান্ত আজকার খুবই বিরল।
কারণ, অনুরূপ অপরাধের সুষ্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলেও জুরিগণ উল্লিখিত ব্যক্তিকে অপরাধী সাব্যস্ত করতে অনীহা প্রকাশ করে।
গ. ঈশ্বর নিন্দা: ঈশ্বর নিন্দা বলতে সৃষ্টিকর্তা, যীশুখ্রীস্ট তথা বাইবেল, সাধারণ মানুষের ধর্ম এবং অন্যান্য ধমীয় পুস্তক পুস্তিকার বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীও অনুভূতিকে আঘাত করার অভিপ্রায়ে অথবা গীর্জায় বা আরাধনালয়ের বিরুদ্ধে কুৱসা রটানোর উদ্দেশ্যে যে কোন কিছু বলা অথবা প্রকাশ বা প্রচার করাকে বুঝায়।
ঈশ্বর নিন্দা বিধি বহির্ভূত কাজ হিসেবে গণ্য।
ঘ. অশ্লীলতা: বে-আইনীভাবে কোন অশ্লীল পুস্তকাদি বা প্রচারপত্র, সাহিত্য এবং ছবি ইত্যাদি প্রকাশকে বোঝায় যা সাধারনভাবে মানুষের নৈতিক চরিত্রকে কলুষিত করতে পারে। অবশ্য প্রাচীন শিল্পকলা বা সাহিত্যের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে।
ঙ. আদালত অবমাননা: আইন-আদালতের এখতিয়ার ও ক্ষমতাকে অক্ষুণ্ন রাখার এবং এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার কতগুলো প্রশাসনিক কারণ এবং সরকারি নীতি রয়েছে। কাজেই আদালত অবমাননাকারীকে দৃষ্টান্তমূলত শাস্তিপ্রদান করে থাকে।