ঘরজামাই - ভালোবাসার গল্প কষ্টের Bangla Sad Love story

ভালোবাসার গল্প কাহিনী, ভালোবাসার গল্প অবহেলা, ভালোবাসার ইমোশনাল গল্প।




গল্পঃ ঘরজামাই 
লেখকঃ নন্দিতা প্রীতি

পিয়াস তোমার লাজ লজ্জা না থাকলেও আমার লাজ লজ্জা আছে।তোমার মতো কেউ শ্বশুরের ঘাড়ের উপর বসে নেই।


পিয়াস চুপটি করে বিছানায় বসে আছে।পাশেই অয়নন্দিতা বসে চোখের জল ফেলছে।অয়নন্দিতা বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে।রূপে গুণে পরিপূর্ণ একজন মানবী। পিয়াসের সঙ্গে বিয়ের মাত্র একমাস পূর্ণ হয়েছে।বিয়ের পরদিন থেকে পিয়াস নিজের শ্বশুরবাড়িতে আছে।অবশ্য অয়নন্দিতার মা বাবা এমনটাই চেয়েছিলেন।আর এখন অয়নন্দিতার মা বাবা অয়নন্দিতার চেয়ে বেশি আদর পিয়াসকে করেন।মাঝে মধ্যে অয়নন্দিতার হিংসে হয়।তবে পিয়াসের এই শ্বশুরবাড়িতে থাকাটা অয়নন্দিতা কিছুতেই মানতে পারছে না।পিয়াস ও বড়লোক বাপের ছেলে।টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই।কিন্তু তাও গত একমাস ধরে ঘরজামাই হয়ে আছে।কেন?বারবার এই প্রশ্ন অয়নন্দিতা পিয়াসকে করছে।কিন্তু পিয়াস বারবার চুপ থেকেছে।অয়নন্দিতা নিজের বান্ধবীদের কাছে প্রতিনিয়ত মজার ট্রপিকে পরিণিত হয়েছে।কারণ অয়নন্দিতার স্বামী ঘরজামাই।আশপাশের লোকের কথা এবং নিজ বান্ধবীদের কথা শুনতে শুনতে অয়নন্দিতা ত্যক্ত আজ।চোখ দিয়ে অবিরত জল পড়ছে।কিন্তু তাও পিয়াসের হৃদয় গলছে না।অয়নন্দিতা পিয়াসের পাশ থেকে দাঁড়িয়ে চোখ মুছল।পিয়াস মাথা নিঁচু করে বিছানায় বসে আছে।অয়নন্দিতা আজ প্রচন্ড রেগে গেছে চিৎকার দিয়ে বলল


তোমাকে আজ বলতেই হবে কেন তুমি ঘরজামাই হয়ে এখানে মুখ থুবড়ে পড়ে আছো?


তাও পিয়াস চুপ করে আছে।অয়নন্দিতা ক্রোধে জ্বলে উঠল।পিয়াসের সামনে গিয়ে কর্কশস্বরে বলল


তোমার কি মান সম্মানবোধ কিছু আছে?আত্মসম্মানবোধ থাকলে এভাবে বেহায়ার মতো শ্বশুরবাড়িতে পড়ে থাকতে না।তুমি পুরুষ মানুষ নাকি অন্যকিছু


পিয়াস আচমকাই দাঁড়িয়ে ক্রোধান্বিত হয়ে অয়নন্দিতার গায়ে হাত তুলতে গেলে অয়নন্দিতা চোখমুখ খিচে দাঁড়িয়ে রইল।কারণ নিশ্চয়ই এবার পিয়াস চড় মারবে।কথাটা বোধহয় আত্মসম্মানে লেগেছে।কিন্তু অনেকক্ষণ কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে অয়নন্দিতা চোখ খুলে তাকালো।একি পিয়াস কোথায় গেল?অয়নন্দিতা রুমে চোখ বুলিয়ে দেখল পিয়াস জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।অয়নন্দিতা এগিয়ে গিয়ে পিয়াসের কাঁধে ধরতে আচমকা পিয়াস অয়নন্দিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।অয়নন্দিতা চুপ হয়ে গেল।নিজের ঘাড়ে ঠান্ডা জলের অনুভূতি পেয়ে অয়নন্দিতা চমকে উঠল।পিয়াস কাঁদছে?কিন্তু কেন?অয়নন্দিতা পিয়াসকে ছেড়ে বলল


পিয়াস তুমি কাঁদছো?


পিয়াস এক হাত দিয়ে চোখের জল মুছে বলল


হুম।তোমার কথাগুলো শুনে প্রচন্ড খারাপ লাগলো।কিন্তু তাও তুমিতো আমাকে ভালোবাসো।অয়নন্দিতা আমি ভালোবাসার বড্ড কাঙাল।জানো আমি মায়ের নেওটা ছিলাম।সবসময় মায়ের সঙ্গে ঘুরঘুর করতাম।মায়ে খাইয়ে না দিলে একবেলাও খেতাম না।আচমকাই ছয় বছর বয়সে নিজের মাকে হারিয়েছি।তখনো ভালোভাবে বুঝতে শিখিনি।কেউ একজন বলেছিল আমার মা আর ফিরবে না।সেটা শুনে আমি চিৎকার করে কেঁদে সেন্সলেস হয়ে যাই।তারপর খাওয়া দাওয়া ঠিকঠাক করতাম না। সবসময় চুপচাপ থাকতাম আর মায়ের জন্য কাঁদতাম।আমাদের বাসায় কাজ করতেন একজন মহিলা উনিই আমার দেখাশুনা করতেন।তারপর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলেন।সেদিন আমার আনন্দ কে দেখে?আমার নতুন মা আসবেন বলে কথা।বাবার বিয়েতে আমি বরযাত্রী গেলাম।সেদিন আমাদের বাসায় শুধুমাত্র বাবার স্ত্রী এসেছিলেন,আমার মা নয়।"


অয়নন্দিতার দৃষ্টি পিয়াসের দিকে।পিয়াসের চোখ ছলছল করছে।পিয়াস এক হাত দিয়ে চোখের জল মুছে বলল


আমি সবসময় নতুন মায়ের পেছনে ঘুরতাম।উনার স্নেহ পাবার জন্য আকুল হয়ে থাকতাম।কিন্তু ওই যে বললাম বাবা আমার মা নয় উনার স্ত্রী এনেছিলেন।উনি কখনোই আমাকে ভালোবেসে কাছে ডাকেন নি।সবসময় আমাকে অপমাণ করেছেন।বকা ঝকা করেছেন।উনি কখনো বুঝতেই চান নি আমি উনাকে নিজের মা হিসাবে চাই।স্নেহময়ী মা।আমি উনার চোখে মমতা দেখার জন্য অনেককিছু করেছি।কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি।উনি শারীরিকভাবে আমায় অত্যাচার না করলেও মানসিক অত্যাচার করেছেন।প্রতিরাতে আমি কেঁদেছি।আমার কান্না শুনার কেউ ছিল না।আসলে কি বলতো শারীরিক অত্যাচার সহ্য করা যায়,কিন্তু মানসিক অত্যাচার মানুষ সহ্য করতে পারে না।যখন আমার ভাই হলো মা আরো পাল্টে গেল।তখন আমি বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম উনি আমার ভাইয়ের মা। আমার নয়।মা ভাইকে যখন আদর করতেন আমি আশেপাশে থাকতাম উনি যদি আচমকা ভালোবেসে আমাকে ডাকেন এই আশায়।কিন্তু উনি আমাকে দেখামাত্র ভাইকে ঘরে নিয়ে যেতেন।জানে না কেন এটা করতেন।বাবা সারাদিন অফিসে থাকতেন যার কারণে কিছুই জানেন না।আসলে আমি জানতে দেই নি।কি হবে বলে?অশান্তি?উনিতো সর্ম্পকে আমার মা হন।তাই আর আজ অব্দি বাবাকে বলা হয়নি।অয়নন্দিতা এখানে আমি তোমার মায়ের ভালোবাস,আদর, স্নেহ মমতা পাওয়ার জন্য থেকেছি।সত্যি তুমি ভাগ্যবতী তোমার এমন একজন মা আছেন।এই একমাসে তোমার মায়ের যতটুকু স্নেহ,মমতা পেয়েছি তাতে আমার পুরো জীবন চলে যাবে।এবার মনে হচ্ছে আমার নিজের বাসায় যাওয়া উচিত।আমি মায়ের ভালোবাসা সঞ্চয় করে নিয়েছি যে।"


অয়নন্দিতার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে।পিয়াসের কথাগুলো ওর কান্না ধরে রাখতে পারে নি।তার মানে পিয়াস এতদিন এই জন্য এই বাড়িতে ঘরজামাই হয়ে থেকেছে?পিয়াস সত্যি কাঙাল।মায়ের ভালোবাসার কাঙাল।


পিয়াস অয়নন্দিতার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হেসে বলল


টাকা পয়সার অভাব আমার সত্যিই নেই।কিন্তু ভালোবাসার বড্ড অভাব অয়নন্দিতা।যা চাইলেও আমি টাকা দিয়ে কিনতে পারবো না।আমার জন্য লোকের গুঞ্জনা তোমাকে শুনতে হয়েছে তাঁর জন্য সত্যি আমি দুঃখিত।


অয়নন্দিতা পিয়াসকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো।নিঃশব্দে চোখের জল ফেলে বলল,


তুমি চাইলে আমরা সারাজীবন এই বাড়িতেই থাকবো পিয়াস।


পিয়াস নিজের চোখের জল মুছে অয়নন্দিতাকে বলল


লোকের গুঞ্জনা...


আমি কাউকে পরোয়া করি না।


পিয়াস মৃদু হাসলো।

............................সমাপ্ত.....................


[বিঃদ্র-সবাই এক হয় না।কাউকে আঘাত করার মনোবৃত্তি আমার নেই]