আজ বাসর রাত তবুও সোহানের শরীরের ভিতর কাপুনি দিচ্ছে।শীতের রাতে ছাদের এক কোনে বসে গুটিসুটি মেরে রয়েছে।মুখ থেকে অনেকখানি রক্ত বের হয়ে গিয়েছে।বাসর রাতে মারধর খাবার পর বাসর ঘরে কেমন করে ঢুকবে সেটাই মাথাই আসছে না সোহানের।এমন দিনে বাইরে থেকে মার খেয়ে এসে ভিতরে কতটা কষ্ট হবে এটা ভেবেই সোহানের গায়ের লোম দাড়িয়ে যাচ্ছে।পরিস্হিতির শিকার সবাইকে ছোট বানিয়ে নেই নইতো দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দেই।হইতো সে আজ বাসাই ফিরতে পারতো না কিন্তু ভাগ্রক্রমে সে পালিয়ে আসতে পেরেছে।পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ থেকে রক্তগুলো সরানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু সে খেয়াল করলো মুখে সে ভালোভাবে হাত লাগাতেই পারছে না কারন হাতগুলো ব্যথাই কাপছে।খেয়াল করলো যখন ছেলেগুলো তার হাতের উপর লাঠি দিয়ে প্রচন্ড আঘাত করছিলো তখন কে যেন বলেছিলো,,
---কিরে তোর বউকে হাত দিয়ে ধরতে চেয়েছিলি?কাছে নিতে চেয়েছিলি?যা এবার খুব আদর করবি দারা তোর হাত আরো সুন্দর করে দিচ্ছি।
ছেলেগুলো সোহানের কথায় একদম থামেনি বরং আরো কষ্ট বেশী দিয়েছে।কিন্তু সোহান একদম থেমে যাইনি।বাস্তবে ফিরে আসতেই খেয়াল হলো এতো রাতে মেয়েটা একা কিভাবে রয়েছে?সে তো রাতে একা থাকতে ভয় পাই।
তার জন্য তো একটা মানুষের বুক দরকার যেখানে সে নির্ভয়ে মুখ লুকিয়ে ঘুমাতে পারবে।যেভাবেই হোক মেয়েটাকে একা রাখা যাবেনা।পা টা বাড়িয়ে দ্রুত যাবার জন্য এগোতেই হটাৎ করেই পড়ে গেলো।কেন যেন তার পা একদম এগোতে চাইছিলো না।সোহানের মন হচ্ছিলো কারা যেন এখনো তার পায়ের উপর অত্যাচার করছে আর বলছে তোর আজ বউ এর কাছে যাবার খুব শখ হয়েছে বুঝি?দ্বারা তোর পা টা আমরা রক্তে সাজিয়ে দিই।কথাগুলো সোহানের কানে যতো বাজছিলো ঠিক ততোটাই সে উঠে দাড়াতে চেষ্টা করতে লাগলো।থেমে গেলে হবেনা।পা টা কোনরকমে দাড় করিয়ে ফ্রেশ রুমের দিকে এগোতে লাগলো।কিন্তু আজ সোহানকে অদ্ভুত দেখাচ্ছে তার চোখে মুখে ভাবনার বিন্দুমাএ আচড় দেখা যাচ্ছে না।চোখে একফোটা পানিও নেই।হইতো সোহানের জিবনে শুধু ভালোবাসা নামক জিনিষটাই রয়ে গিয়েছে।ভাবতেও অবাক লাগে এমন এক পরিস্হিতিতে কেউ তার প্রিয় মানুষের জন্য নিজেকে সংকটে ফেলে সেই প্রিয় মানুষটির এক ফোটা হাসিমুখ দেখার জন্য।এইরকম ভালোবাসাটা যেমন খুব কম ঠিক তেমনি এইরকম ভালোবাসাতে অনেক বাধা থাকে যেটা নিজেকেই পার করে নিতে হয়।কিন্তু প্রিয় মানুষটির হাসি যতটা আনন্দ দিতে পারে ঠিক ততোটাই দুঃখ দিতে পারে।
সোহান আয়নার সামনে দাড়িয়ে পড়লো।হাতটা উপরে উঠাতেই
পারছে না তবুও মুখ পরিষ্কার করার চেষ্টা করছে।তার মনে হতে লাগলো আয়নার সামনে ওই ছেলেগুলো ভেসে উঠছিলো আর বলছিলো তারাতারি যা তারাতারি যা নাহলে কিন্তু আর বাচবি না।ওদের হাত থেকে বাচতে গিয়ে কোথা দিয়ে দৌড়ে পালিয়েছে সেটা মনে নেই সোহানের কিন্তু সে আতঙ্ক সোহানের ভিতর তখনো কাজ করছিলো।কিন্তু সে যার জন্য এসেছে সে তো একদম একা রয়েছে,,ভাবতেই পাশ থেকে চশমাটা চোখে দিয়েই রুমের দিকে এগোতে লাগলো।রাতে পালানোর সময় তার যতটা ভয় কাজ করছিলো তার চেয়েও বেশী ভয় এখন তার ভিতরে ঘুরঘুর করছে।কারন সে জানতো ভিতরে গিয়ে সে তার মনের মতো আশাকর অবস্হা পাবে না।সোহান যখন এক দৌড়ে রুমের সামনে চলে এলো তখন খেয়াল করলো রুমটা খোলা রয়েছে।চারপাশে খেয়াল করে দেখলো চারপাশটা একদম নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে।সবাই যার যার মতো ঘুমিয়ে পড়েছে।সোহান পা টা হালকা করে বাড়িয়ে দিয়ে রুমে ঢুকেই কিছুটা অবাক চোখে চারদিকটা ভালো করে দেখতে লাগলো।চারদিকের একি অবস্হা হয়ে রয়েছে?সবকিছু চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।কেউ দেখে হইতো এটা বাসর ঘর বলে মানতেই চাইবে না।সোহান বুঝতে পেরেছে কেন বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
সোহান চুপিচুপি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে চারদিখে কি যেন খুজতে লাগলো।
হটাৎ তার নাকে একটা গন্ধ আসতে লাগলো।বুঝে উঠতে পারছিলো না এমন বিচ্ছিরি গন্ধটা কোথা থেকে আসছিলো।মদের গন্ধ টের পেতেই বেলকনির দিকে কিছু একটার আওয়াজ পেতেই ধীরে ধীরে গিয়ে দাড়িয়ে নি.,..... বলতেই কে যেন সজোরে এক ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দিয়েই দৌড়ে পালিয়ে গেলো।ফ্লোরের উপর পরে যেতেই চিৎকার দিয়ে উঠলো সোহান।কোনরকমে উঠে দাড়াতেই প্রচন্ড রাগে রাগে সোহানের চোখদুটো লাল হয়ে গেলো।কিন্তু ব্যথা আর মনের বাধাটা তার রাগটাকে দমিয়ে নিতে বাধ্য করলো।ভাবতেই অবাক লাগছে কেউ বাসর রাতে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে এইসব লুচ্চামি করতে পারে?
খেয়াল করলো নিশি হেলে দুলে রুমে ঢুকছে।হ্যা এটাই নিশি যার জন্য সোহান নামক ছেলেটা অপেক্রা করছিলো।শাড়িটা নিজের গায়ে জরিয়ে নিয়ে নিশি সোহানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।সোহান স্পষ্ট দেখতে পেয়েছে নিশির চোখে কোনে পানি জমে রয়েছে।তার ভিতর নেশার কোন প্রভাবই পড়েনি।চোখটা নিচু করে চশমার আড়াল হতে বলে উঠলো,,
--- এসব না করলেও পারতে?
সোহানের কথা শুনে নিশির হাতদুটো পিছনে চলে গেলো।টেবিলের পাশ থেকে সে সোহানের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো,,
--- সরি সোহান আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।জানোতে তুমি আসছিলে তাই আমার অভিকে ঢেকে পাঠিয়েছি জানোতো আমার না আবার কেউ কাছে না
থাকলে খুব এল্যার্জি হয়।
এটা বলে সজোরে এক থাপ্পড়ে নিচে ফেলে দিলো সোহান কে।
.
গল্পের নামঃ স্বামীর_অধিকার
.
#পর্ব_০১
.
.
পরবর্তী পর্ব আসছে