অচেনা মানুষ - বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প - basor rater golpo

 


পিরিয়ড অবস্থায় বাসর ঘরে বসে আছি। অসহ্য লাগছে। ন্যাপকিন টাও বোধয় ড্যামেজ হয়ে আসছে। সময় টা হয়তো সাড়ে এগারো টা ছুই ছুই। বর টাও আসার কোন খবর নেই। চৈত্র মাসের প্রায় শেষদিক চলছে। আজকে হয়তো কালবৈশাখী ঝড় উঠতে। আমার আবার একটা ঝড়ের সময় ভয়টা একটু বেশিই লাগে। আজ প্রথম রাত বিয়ের। মানুষটাকে আজই প্রথম দেখেছি বিয়ের সময় আর দেখা হয় নি। বাবাই বিয়ের সব কথা পাকাপোক্ত করেছেন। বাবার প্রতি বিশ্বাস ছিলো এবং আছে। তিনি আমার কোন খারাপ মানুষকে চুজ করতে পারেন না। তবুও এই অবস্থায় নিশ্চয়ই তিনি যদি তার পুরুষত্বের প্রভাব টা ঘাটায় তাহলে অনেক কস্টকর হয়ে যাবে। বিশ্বাস তো আর করা যায় না।
খুব অসস্তি লাগছে। সেই এগারো টা বাজে এই বদ্ধ ঘরটায় আমায় রেখে গেছেন আমার ননদী। তার আচরণ টা তে বুঝতে পেরেছি আটদশ টা ননদের মত তিনি নন। বাকীটা পরে বুঝা যাবে।
মনে আশঙ্কা। শরীর টাও ভালো লাগছে না। মনে এতটা আশঙ্কা থাকতো না। যদি না শরীর টা ভালো থাকতো। আতঙ্ক টা ক্ষনে ক্ষনে বেড়েই চলেছে। অচেনা একজন মানুষ। তার উপর ওনার পুরো অধিকার আছে আমার উপর। যদিও আমারও আছে তার প্রতি। তবুও সে যদি চায় আমি কি না করতে পারবো। সে তো আর একটা মেয়ের এই অসহ্যনীয় যন্ত্রণার কথা টা বুঝতে পারবে না। সে তো নিজের ক্ষুদা টা নিবারন করবে। এতে যে আমার জীবনটা বেরিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে যাবে।
ঘড়ির কাটা এখন এগারো টা বেজে পঞ্চাশ মিনিট। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি সাথে অতি বেগে বাতাসও বইছে। একলা ঘরে বসে আছি। ঘরটা মোটামুটি ভালো করেই ফুল দিয়ে সাজানো। খুব সুন্দর সুগন্ধ আসছে ফুলের।
হুট করেই ঘরের দরজা টা খুলে কেউ একজন কাকভেজা হয়ে রুমে প্রবেশ করলো। হাতে একটা বাক্স আর একটা শফিং ব্যাগ।
দেখেই বুঝতে পারলাম এতক্ষণ যার জন্য এই একলা ঘরে অপেক্ষা করছিলাম ওনিই সে মানব।
আমার হাতে শফিং দিয়ে বলে উঠলো...
ওনিঃ ওয়াসরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে আসো।
মুখ দিয়ে কিছু না বলে মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানিয়ে ওয়াসরুমে আসলাম।
ব্যাগটা খুলে দেখলাম। একটা সুতি ওয়ান পিচ জামা সাথে একটা প্লাজু সাথে একটা প্যাকেট করা জিনিস। প্যাকেট খুল দেখি যে একটা ন্যাপকিনের প্যাকেট। কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে ঠাই দাড়িয়ে রইলাম। মাথায় কিছুই আসছে না। লোকটা বুঝলো কি করে...?
আর কিছু ভাবতে পারবো না...বেরিয়ে একবারে জিগ্যেস করে নিলে জানা যাবে। এই মুহুর্তে আমার কাজ আমি করি।
চেঞ্জ করে এসে দেখি ওনিও ভেজা জামা চেঞ্জ করে একটা সেন্টু গেঞ্জি গায়ে দিয়েছেন। সাথে একটা লুঙ্গি পড়েছেন পুরোই বাঙালী।
বডি টাও জোস বানিয়েছে। শ্যাম বর্ণের মানুষ টা। মুখে তেমন দাড়ি নেই। থুতনিতে হালকা কিছু দাঁড়ি ছোট ছোট।
ফোনে কি যেন করছিলো।
উহুম...
এভাবে গলা ঝাকা না দিয়ে মুখ দিয়ে কথা বলতে কি কোনো সমস্যা..? (ওনি)
নাহ তা না...
তাহলে...
কিছু না...
কিছু বলবে..?
হুহ..
বলো..
আমার যে ওটা লাগতো।। আপনি বুঝলেন কি করে???(আমি)
বিয়ের সময়...তোমার অস্থিরতার দ্বারাই বুঝতে পেরেছি...
অস্থিরতাটা হয়তো অন্য দিক থেকে ছিলো...?
তবে বসতে আনইজি ফীল করাটা..?(ওনি)
হুম...
বসা থেকে উঠে টেবিলের উপর থাকা বাক্স টা খুলে। আমায় কাছে ডাকলো।।।
একটা কেক রাখা।
শুভ জন্মদিন মিস অনু...
অবাক হয়ে লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম...লোকটা জানলো কি করে যেখানো আমি নিজেই ভুলে গিয়েছি আজ আমার জন্মদিন।
পরপর দুইটা বিস্ময় আমায় বিস্মিত করে দিয়েছে।
সরি তোমাকে একটু বেশিই ওয়েট করতে হয়েছে। শুধু কেকটা হলে বন্ধু দের বললে ওরা নিয়ে আসতো তবে তোমার অতি প্রয়োজনীয় জিনিস টা তো ওদের দিয়ে আনাতে পারি না...(ওনি)
আপনি জানলেন কি করে আজ আমার জন্মদিন...? (অবাকের স্বরে)
নিকাহ নামাতে স্বাক্ষর করার সময় তোমার জন্মতারিখ টা আমার চোখে পড়েছিলো....ভাবলাম আজ রাত টা এই বিষয় নিয়ে অন্তত স্মৃতিময় করা যেতে পারে....
(ওনি)
লোকটার কথা বলার অঙ্গিভঙ্গি গুলো দেখছি আর অবাক হচ্ছি। অবাক হওয়া কি সত্যের নাকি তাকে আমার মনে ধরেছে।
কেকটা কেটে একে অপরকে খাইয়ে দিলাম।
শোনো ঘুমিয়ে পড়ো তোমার ঘুমানোর দরকার...(ওনি)
আপনি ঘুমাবেন না....
হুম
দুজন ঘুমিয়ে পড়েছি।
সকালে ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথেই অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম কিছু বলার ভাষা আমার নেই...(চলবে)

#অচেনা_মানুষ
পর্ব ০১
লেখা:Adrita Afrin
Next part Coming soon